কলকাতা, ০৪ নভেম্বর : দুপুরে তৃপ্তি করে খাচ্ছেন মাছ ভাত! লুকিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদ। নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি, লিভার। ফেল করতে পারে হার্ট। এমনকি কোমাতেও চলে যেতে পারে যে কেউ। মাছে-ভাতে বাঙালির ঘোর বিপদ। মাছ ছাড়া বাঙালির ঠিক চলে না। উদর আর মন তৃপ্তি করা মাছ খেয়েই সন্তর্পনে শরীরে ঢুকছে মারাত্মক বিষ অথচ খাওয়ার সময় টেরও পাবেন না। সবটা জানলে হাড় হিম হয়ে যাবে। এবার থেকে মাছ খাওয়ার আগে দুবার ভাববেন। মাছ নাকি বিষ নাকি প্লাস্টিক? নিজেই নিজের শরীরে ডেকে আনছেন মারাত্মক সব বিপদ। যেখানে বাঙালি সেখানেই মাছের প্রতি অদ্ভুত এক টান। সে এপার বাংলা বলুন, আর ওপার বাংলা। দুই বাংলাকে কোথাও যেন মিলিয়ে দিয়েছে ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর মাছের ঝোল। অনেক মৎস রসিক আবার মাছের মাথা আর পেটি খেতে বড্ড ভালোবাসেন। জানেন কি, যাবতীয় বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় মাছের এই দুই অংশে! অথচ মাছ ছাড়া চলে না বাঙালির। এবার এই অভ্যাস বদলানোর সময় হয়ে এসেছে।
মাছ : সাইলেন্ট কিলার
কী বলছে বাংলাদেশের গবেষণা?
বাংলাদেশের বিখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের তরফ থেকে একটি গবেষণা চালানো হয়। যে গবেষণায় উঠে আসে বুকে ভয় ধরানো তথ্য। গবেষণা চালাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে ১৭টি প্রজাতির প্রায় ৪৮টি মাছ সংগ্রহ করা হয়েছিল। বাজারে পাওয়া যায় এমন দেশি মাছের মধ্যে প্রায় ১৫টি প্রজাতির মাছের শরীরে প্লাস্টিকের ক্ষতিকারক টুকরো পাওয়া গিয়েছে। এই মাছের তালিকায় রয়েছে রুই, তেলাপিয়া, কৈ, কালবাউস, বেলে, ট্যাংরা প্রভৃতি। গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ৭৩ শতাংশ মাছের শরীরেই রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক কিংবা প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা। যা মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে স্লো পয়জন ঘটায়। আপনিও বুঝতেও পারবেন না কখন মৃত্যু শিয়রে এসে হাজির হয়েছে। শুধু কি প্লাস্টিক? মাছের শরীরে জলাশয় কিংবা সমুদ্র থেকে ঢুকে যায় পারদ, সীসা, ক্রোমিয়ামের মত ক্ষতিকারক রাসায়নিক। তারপর মাছ সংরক্ষণের জন্য বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হয় ফর্মালিন। এগুলি যে প্রাণঘাতী রোগের মোক্ষম কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাছের খাবার জানলে গা গুলিয়ে উঠবে
মফস্বলের দিকে পাড়ায় পাড়ায় কিংবা বাজারে যদি কোন বিক্রেতা হাঁড়িতে করে জ্যান্ত মাছ নিয়ে আসেন সেখানে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ে। তার একটাই কারণ, অনেকেই চান পুকুরের টাটকা মাছ খেতে। ভেরির মাছ অনেকের না পসন্দ। অথচ বাজারে গিয়ে কি বোঝা সম্ভব কোনটা ভেরির মাছ কিংবা কোনটা পুকুরের মাছ? তবে যদি জানতে পারেন চাষ করা মাছের মাছের খাদ্যটা কি, তাহলে গা গুলিয়ে উঠবে।
বহু বাজারেই রবিবার আসলে একটু চিত্রটা বদলে যায়। ছুটির দিন বলে কথা। চারিদিকে মাংস কাটার ধুম পড়ে যায়। তারপর বেলা শেষ হলে ছাগল কিংবা মুরগির ছাঁট অংশ ড্রামে করে চলে যায় বড় বড় জলাশয়ের কাছে। এগুলি হলো হাইব্রিড মাগুরের উত্তম খাবার। ছাগল আর মুরগির ছাঁট অংশ, রক্ত খেয়ে এই মাছগুলি খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। আবার বহু ভেরিতে হাঁস মুরগির বিষ্ঠা মাছেদের খাবার হিসেবে দেওয়া হয়। এছাড়াও মাছের খাবারের তালিকায় রয়েছে রেশম কিটের পিউপা, পশুর নাড়িভুঁড়ি, মাছের গুঁড়ো, সর্ষের খোল, বাদাম খোল, সয়াবিন চূর্ণ, চালের কুঁড়ো, গমের ভুসি,বার্লি, রাই প্রভৃতি।
প্রাণ কাড়বে মাছ! কিন্তু কেন?
•মাছ মাংসে যে বিষ রয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে অনেক আগেই। উৎপাদন বাড়াতে বহু মাছ, পশু এবং হাঁস মুরগির খামারে ব্যবহার করা হচ্ছে চামড়া শিল্পের বর্জ্য। এগুলিতে থাকে মাত্রারিক্ত ক্রোমিয়াম। সাধারণত মাছ, মুরগি কিংবা কোন মাংস রান্না করলে ক্রোমিয়াম সহজে নষ্ট হয় না। কারণ এদের সহনীয় ক্ষমতা প্রায় ২৯০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। আর আমরা রান্না করি মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে।
মাছের শরীর থেকে বিষ সরাসরি ঢুকবে আপনার শরীরে। যার ফলে স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে কিডনি। অকেজ হয়ে যাবে লিভার। মস্তিষ্ক সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ক্রোমিয়াম শরীরের কোষ নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীকালে যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন ট্যানারিতে প্রায় ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয় যা রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করা হয় মুরগি এবং মাছের খাবার হিসেবে।
•অপরদিকে মাছ সংরক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয় ফরমালিন। এটি হলো একটি অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। এমনকি এই ফরমালিন মর্গে মৃত দেহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। ফরমালিনের স্বল্প মেয়াদী ব্যবহারের প্রভাবে কাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, ত্বকে জ্বালা,চোখের জল ভাব বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। আর যদি দীর্ঘদিন ধরে আপনার শরীরে ফরমালিন প্রবেশ করে তাহলে ব্লাড ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এবং আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফরমালিনকে মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি রাসায়নিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ফরমালিনের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি এবং লিভার। এর ফলে কোন ব্যক্তি কোমাতেও চলে যেতে পারেন।
•মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হল তেলাপিয়া। দামে কম, স্বাদে ভালো। এই মাছের মধ্যে লুকিয়ে হৃদরোগ, পক্ষাঘাত, হাঁপানির মতো রোগ। আসলে তেলাপিয়ার মাঝে জমা হয় ডিবুটাইলিন নামক এক কেমিক্যাল। মুক্ত জলের মাছের থেকে খামারের চাষ করা তেলাপিয়ার শরীরে ডাই অক্সিন থাকে প্রায় ১১ গুণ বেশি।
কীভাবে বিষ মুক্ত মাছ খাবেন?
•মাছ কেনার সময় ফরমালিনের উপস্থিতি বোঝা যায় না। তাই ভালোভাবে সঠিক পদ্ধতিতে মাছ ধুতে হবে। বাজার থেকে মাছ কিনে কলের জলে অন্তত ১০ থেকে ১২ মিনিট ভালোভাবে ঘষে ঘষে মাছের টুকরো গুলো ধুয়ে নেবেন।
•মাছের শরীরের যে অংশে তেলের ভাগ বেশি সেখানেই বিষাক্ত পদার্থ অতিরিক্ত পরিমাণে সঞ্চিত থাকে। তাই সেই অংশ খাওয়া একটু এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে মাছের মাথা আর পেটি।
•বাজার থেকে কেনা মাছের কানকো কিংবা শরীর থেকে যদি কেরোসিন বা পুরনো কাদার গন্ধ থাকে তাহলে বুঝবেন মাছের দেহে কীটনাশক পদার্থ রয়েছে। এই ধরনের মাছ কিনবেন না।
• কীটনাশক ওষুধ থেকে বাঁচতে মাছের ফুলকা আর চোখ বাদ দিয়ে দিন।
•মাছের টুকরো গুলো প্রথমে সরষের তেলে ডুবিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। তাহলে এর ভিতরে সঞ্চিত কীটনাশক তেলের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তারপর ওই টুকরো গুলি অন্য তেলে রান্না করুন। তবে এই নিয়ম কজনের পক্ষে করা সম্ভব তা বলা যাচ্ছে না। কারণ তেলের যা দাম সেক্ষেত্রে এইভাবে মাছ ভেজে খাওয়া অনেকটা বিলাসিতার মতো। সূত্র : প্রথম কলকাতা